শত শত বছর ধরে দলে দলে সহস্র সহস্র লুন্ঠনজীবী দস্যু সাম্রাজ্য বিস্তারের নামে, ধর্মপ্রতিষ্ঠার নামে এই শস্যশ্যামলা বাংলাকে হতমান করে গেছে। এদের দ্বারা নির্বিচারে হত্যা, নারীনিগ্রহ , লুন্ঠনকে শান্তিপ্রিয় মানুষ ভাগ্যের নামে সহ্য করেছে। তারা মরেছে, পালিয়েছে, বার বার তাদের ঘর ভেঙেছে, ফের তারা গড়েছে, ফের সে ঘর ভাঙা পড়েছে।
এই রক্তলাঞ্ছিত অভিজ্ঞতা শুধু মানুষের নয়, মানুষের শ্রমবুদ্ধিজাত যাবতীয় শিল্প ও শিল্পকর্মের ধ্বংসসাধন করেছে।
মোগল শাসনের শেষদিকে আলীবর্দী -শাসিত রাঢ় বাংলায় বর্গী আক্রমণ হতে থাকলে গ্রামের পর গ্রাম ফাঁকা হয়ে জঙ্গল হয়ে যায়।
চৌথ আদায়ের জন্য বর্গীদের অমানবিক এই অত্যাচার রোধ করতে সহজে পারেননি স্বয়ং নবাব, বর্ধমানের রাজা পালিয়ে গেছেন; এমনকী ভয় পেয়ে কলকাতা ঘিরে মারাঠা খাল কেটেছে সদ্য অস্ত্র হাতে নেওয়া বিদেশী বণিককুলও।
তবু ভাগ্যশাসিত সাধারণ বাঙালি রাজশক্তির বলয়ের বাইরে দাঁড়িয়েও কখনও কখনও স্বভাবের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে । অজয় নদের ধারের তৎকালীন দুই প্রতিষ্ঠিত বন্দরকে কেন্দ্র করে বর্গীদের বিরুদ্ধে জনতার কঠিন প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল।
এইসব কাহিনী প্রচলিত রাষ্ট্রপরিবর্তনের ইতিহাসে স্থান পায় না। পায় মানুষের লোককথায়, ছড়ায় আঞ্চলিক যৌথস্মৃতিতে, চিঠিপত্রে, এবং পুঁথিপত্রে।
বৈষ্ণব, শাক্ত, তান্ত্রিক, পীর অধ্যুষিত আঠারো শতকের রাঢ়বঙ্গে মারাঠাদস্যু প্রতিরোধের এই কাহিনীকে কেউ নিশ্চিত কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু এই কল্পনাগুলির ভেতরের অজস্র শিকড়ের জালকে ,মহান সত্যকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
Others