ডুয়ার্সের অন্তর্গত এক ছোট জনপদ দোমোহনি। তিস্তা নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত এই স্থানটির নাম হয়তো অনেকেই শোনেনি। আবার কেউ হয়তো শুনেছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পে। এক সময় এই দোমোহনি ছিল ডুয়ার্সের কেন্দ্রবিন্দু। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় দোমোহনি এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহ বহু প্রাচীন ঘটনাবলীর সাক্ষী। মহাভারতের যুগ থেকে শুরু করে গুপ্তযুগ, পাল যুগ এবং পরবর্তী সময় কোচ রাজবংশের সাথে জড়িয়ে এই অঞ্চলের ইতিহাস । তিস্তার পূর্ব পার পর্যন্ত ছিল কোচ রাজত্ব আর পশ্চিম অংশ ছিল রায়কত রাজাদের। দোমোহনির খুব কাছে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল ছিল এক রহস্যময় পথ। দেবী চৌধুরানীর গল্প এখনো ঘোরাফেরা করে বৈকুণ্ঠপুরে। ব্রিটিশ আমলে খুব গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছিল দোমোহনি। তার আগে কিছুকাল ভুটান রাজ্যের অন্তর্গত থাকায় দুই পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যে পরে যায়। চা ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে রেল যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়ে। পলহোয়েল সাহেব তৈরি করেন সেসময়ের ডুয়ার্সের সব চেয়ে বড় স্কুল। অনেক বিখ্যাত মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে দোমোহনির সাথে। তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং জ্যোতি বসু। যে তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে ডুয়ার্সের মানুষের জীবন প্রবাহিত হয়, সেই তিস্তার পারে অন্যতম শহর দোমোহনি ছিল মূল যোগসূত্র। পরবর্তী সময় তিস্তাই দোমোহনীর মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বারংবার তিস্তার বন্যায় ধংস হয়ে যায় ব্রিটিশদের সাজানো রেল শহর দোমোহনি। তিস্তা, করতোয়া, ধরলা এসব নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে বারবার আর তার সাথে পাল্টে গেছে নদীর পার্শবর্তী অঞ্চলের রূপরেখা। দোমোহনি এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের না জানা ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে। চক্ষে দেখে আসা বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনার সঙ্গে উঠে এসেছে দোমোহনির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি যা অত্যন্ত গভীর এবং আত্মিক।
Others