যদিও আমি ইতিহসের ছাত্রী নই, কিন্তু ইতিহাস বিষয়টা পড়তে ভালোবাসি। আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির রচনা পড়ার অভ্যাস ছোট থেকেই। ইতিহাস আমার কাছে নিরস সাল তারিখ মুখস্থ করার বিষয় নয়, বরং অতীতের একটুকরো ছাঁচ যার ছাপ রয়ে গেছে শিলালিপিতে, মুদ্রায়, পোড়া ইটে, প্রাচীন গ্রন্থে। এবং প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের নিঝুম একাকিত্বে।
শুধুমাত্র কল্পনা নয়, বরং আমি আস্থা রেখেছি প্রখ্যাত ইতিহাসবিদদের বিশ্লেষণে, তথ্যনিষ্ঠ থেকে কল্পনার জাল বুনেছি। পাঠকদের আগ্রহ নিরসনের জন্য 'শিলালেখ' বইটির শেষে তথ্যসূত্রে কোন কোন বইয়ের তথ্য ব্যবহার করেছি সেই বইগুলি নাম নথিভুক্ত করা আছে।
এছাড়াও প্রতিটি গল্পের সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় টীকা। বিষয়টা যখন ইতিহাস এবং গল্পগুলি যেহেতু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রচিত, আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছিল টীকা অংশটি জরুরী। সব সময় আমি নিজেকে পাঠকের জায়গায় বসিয়ে ভেবেছি আমি বইটি পড়তে পড়তে কি কি হাতের সামনে চাইতাম। সাজিয়েছি বইটি সেই ভাবেই। দিনের শেষে আমি নিজেকে সামান্য পাঠকরূপেই দেখি, নিতান্ত সাধারণ পাঠক মাত্র, অনেক অনেক পড়া বাকি আছে জীবনে।
চারটি বড় গল্প এবং একটি ছোট উপন্যাসিকা রয়েছে বইটিতে। গল্পগুলো বাছতে গিয়ে চেষ্টা করেছি ইতিহাসের যে অংশগুলো নিয়ে সাধারণত আলোচনা হয়না, সেই বিস্মৃতির অন্তরালে ঢাকা পড়ে থাকা চমকপ্রদ ঘটনাগুলোকে গল্পের রূপ দিতে। আমার গল্পে কোন পরাক্রমশালী রাজা মূখ্য চরিত্র নয়, বরং ঘটনাগুলো আবর্তিত হয়েছে খুবই শক্তিশালী কোন না কোন সে সময়কার মানুষকে ঘিরে,-- কখনও সেই মানুষটি পুরুষ আবার কখনও বা নারী। চলুন দু এক লাইনে পরিচয়পর্ব সেরে রাখি গল্প গুলোর সাথে।
কুবেণী-
মহাবংশ নামক শ্রীলঙ্কার প্রাচীন গ্রন্থে ভূমিকন্যা কুবেণী ও বঙ্গদেশের রাজপুত্র বিজয় সিংহের কাহিনী পাওয়া যায়। দ্বীপরাজ্য লঙ্কা বিজয়ে বিজয় সিংহর গৌরব গাথার অন্তরালে অজানা থেকে গেছে সরলা আদিবাসী কন্যা কুবেনীর করুণ কাহিনী।
নন্দোদ্ভব-
শূদ্র বংশজাত মগধের নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা মহাপদ্ম নন্দ কর্তৃক মগধের সিংহাসন অধিকারের রোমহর্ষক ষড়যন্ত্রের কাহিনী নন্দোদ্ভব।
ধ্রুব-
প্রতাপশালী কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্যের থেকে নিজরাজ্য রক্ষার্থে এক ছোট্ট উপকূল রাজ্যের মন্ত্রীর আত্মবলিদানের কাহিনী ধ্রুব।
ভানমতী-
দুর্ধর্ষ গুর্জর জনজাতি কন্যা ভানমতী প্রবল পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কি বাঁচতে পারবে? তার কি স্থান হবে মুঘল হারেমে, নাকি সে নিজের জীবনপথ নিজেই নির্মান করবে?
অভিমানিনী-
যোধপুর রাজ মালদেবের পাটরাণী, জয়সলমীরের রাজা লোণকর্ণের কন্যা উমাদেবী। পতি মালদেবের একটি ভূলের জন্য সারা জীবন তিনি স্বামীর মুখ দর্শন করেননি, অথচ স্বধর্ম থেকে বিচ্যুতও হননি, প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছেন শেরশাহের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে। ছলে-বলে-কৌশলে শেরশাহ পরাজিত করেছিল মালদেব কে, মালদেব আবার উদ্ধার করেন তার রাজ্য। কিন্তু রাণী উমাদেবী? তিনি কি ফিরবেন...
সম্পূর্ণ তথ্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিক ঘটনার পুনর্নির্মাণ 'অভিমানী'।
পাঠকদের সম্মুখে এখন বই, পাঠকেরাই বইটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বইমেলার ১৭০ নং স্টল বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেডের স্টলে এবং অনলাইনে ফ্লিপকার্ট ও আমাজনে পাওয়া যাচ্ছে শিলালেখ। আপনাদের 'শিলালেখ' ভালো লাগলেই গল্পগুলির সার্থকতা। আপাতত বইটির ছবি আমি পেয়েছি, হাতে বইটি স্পর্শ করতে পাব পাঁচ তারিখ শনিবার। সেই ছবি আমি ভাগ করে নিচ্ছি আপনাদের সাথে। আমি সাজিয়েছি শিলালেখ, প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ শিল্পী কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল প্রতিটি গল্পের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ ছবি একেছেন। এবং সমস্ত কর্মকাণ্ডটি সামলেছেন প্রকাশক। পাঠকেরা 'শিলালেখ' কে আপন করে নিলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়।
লেখিকা- অঙ্গিরা দত্ত দন্ডপাট