Hardcover, Soumitra Biswas, Historical Fiction, Novel
অভিজিৎ রায় প্রত্যেক বছর ২৩ জুন মুর্শিদাবাদের দিকে দৌড়োন কেন আর কেনই-বা ৩০০ বছর আগে উমাকান্ত রায় মুর্শিদাবাদের দিকে দৌড়েছিল? অভিজিৎ রায় নাহয় দ্বারকানাথ হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক, কিন্তু, উমাকান্ত রায় কে? মুনিরাম রায়ই-বা কে? মুনিরাম রায়, অঁরি ব্লাশেঁ, গঞ্জালো পেরেরা আর মুর্শিদ কুলি খান-- এই চারজনের মধ্যে মিলই-বা কোথায়? ইতিহাসে অনুল্লিখিত বা স্বল্পোল্লিখিত চারজন মহিলার জন্যে কীভাবে বাংলার এবং এক হিসেবে গোটা হিন্দুস্থানের ইতিহাসের ধারা বদলে গেল তার এক বিস্তারিত আলেখ্য ধরা রয়েছে এই উপন্যাসে। পড়তে পড়তে বোঝা যায় কত সাধারণ, আপাততুচ্ছ ঘটনা কার্নিশে-গজানো গাছের মতো ডালপালা মেলে দিয়ে একটা গোটা সাম্রাজ্যকে ধসিয়ে দিতে পারে। হয়তো একজনের আকাঙ্ক্ষা যদি গগনচুম্বী না হত, কিম্বা, একজনের সন্তানস্নেহ প্রায় ধৃতরাষ্ট্রের পর্যায়ে না পৌঁছোত, তাহলে হয়তো ভারতে ইংরেজ শাসন কায়েম হত না! কে জানে? ইতিহাস-আশ্রিত এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় সেই রোমাঞ্চ ধরা থাকল।
"...এই অসভ্যতা দেখে বাকিরা ছটফট করে উঠলেও সীতারামের ভুরু সামান্য কোঁচকালো না, মুখ যেমনকার প্রশান্ত গন্তীর তেমনিই রইল। এর কথাগুলো কানে তোলার যোগ্য বলেই তিনি মনে করলেন না। গঞ্জালো পেরেরা আর সেবাস্তিয়ানের দিকে ঝুঁকে কথা বলতে শুরু করলেন।
দূত চলে যাবার পরে তিনি কেবল বললেন, 'এই কথার পরে আমি এক পয়সাও কর দেব না। তার জন্যে যা ব্যবস্থা নিতে হয় আমরা দেব 'অশিষ্ট অসভ্য বদমাইশ লোক একটা' বলদেব বলল, 'আমার ইচ্ছে করছিল তলোয়ারের এক কোপে ওর মাথাটা কেটে ফেলি।'
স্মিত হেসে সীতারাম বললেন, 'ওর দোষ নেই। তাকে যা বলতে বলা হয়েছে, সে সেটাই বলেছে। দূতকে হত্যা করা অন্যায়। মনে নেই, দূতের ল্যাজে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ফলে লঙ্কাপুরীর কী হয়েছিল? তবে এবারে মনে হচ্ছে জোরদার যুদ্ধ হবে। আমাদের সেইমত প্রস্তুত থাকতে হবে।"
মাসখানেক পরে ফৌজদার সীতারামকে শায়েস্তা করতে এলেন। সীতারাম অন্যান্য বারের মতই সম্মুখ যুদ্ধ না করে জঙ্গলে ঢুকে গেলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ফৌজদারের সেনাবাহিনীর ওপরে চোরাগোস্তা আক্রমণ চালিয়ে আবার টুক করে জঙ্গলে ঢুকে যেতে থাকলেন।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফৌজদার আবু তোরাপ ২০০ সৈনা নিয়ে একটা আলাদা বাহিনীই গঠন করে তার মাথায় পীর খাঁ বলে একজনকে বসিয়ে দিলেন। পীর খাঁর কাজ হল যে করেই হোক সীতারামকে গ্রেফতার করা। এদিকে সীতারামও গুপ্তচর লাগিয়ে রেখেছেন। পীর খাঁয়ের নড়াচড়ার প্রতিটা খবর তাঁর কাছে চলে আসে। তিনিও সুযোগ বুঝে গভীর জঙ্গলে চলে যান।
সেই সময়ে এক রাত্তিরে হই-হট্টগোলের শব্দে বলদেবের ঘুম ভেঙে গেল। ঘরের বাইরে এসে দেখল চারপাশ অন্ধকার। কাউকে যে কিছু জিজ্ঞেস করবে ব্রিসীমানায় জনপ্রাণী নেই। বাইরের চিৎকার আরো বেড়েছে। বলদেব আবার নিজের ঘরে গিয়ে ধনুক আর তীর নিয়ে দুর্গের ছাদে গিয়ে নীচে জুলতে-থাকা মশালের আলোয় দেখল একটা যুদ্ধ চলছে। শক্রপক্ষের একজন ঘোড়ার পিঠে বসেই এমন কৌশলে তলোয়ার চালাচ্ছে যে কেউ তার কাছে ঘেঁসতে পারছে না। সেইভাবে সে চেষ্টা করছে নিজের দলবল নিয়ে বেরিয়ে যেতে।
ছাদ থেকে দেখলেও এবং অন্ধকার থাকা সত্বেও পীর খাঁ-কে চিনতে বলদেবের অসুবিধে হল না।
মাঝরান্তিরে হঠাৎ আক্রমন করে বাবাকে ধরতে এসেছিল। এখন অবস্থা বেগতিক দেখে পালানোর চেষ্টা করছে। বলদেবের বুকটা উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠল। এতদিন ধরে যে অন্ত্রশিক্ষা করেছে আজ তার পরীক্ষা হয়ে যাক। ধনুকে তীর লাগিয়ে অনেকক্ষন ধরে দম বন্ধ রেখে লক্ষ্য স্থির করল। তারপর তীরটা ধনুক ছেড়ে বেরোতেই এতক্ষণ-লড়াই-করতে-থাকা পীর খাঁ ঘোড়ার পিঠ থেকে ছিটকে পড়ল।
ওর ঘাড়ে তীরটা বিধে রয়েছে। বলদেব দ্রুত দ্বিতীয় তীর জুড়ে নিয়েছিল। ততক্ষণে সীতারামের সৈন্যরা উন্মন্তের মত অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার ওপরে। বলদেবও তীরধনুক নামিয়ে রেখে একখানা তলোয়ার টেনে নিয়ে নিচের দিকে দৌড়তে যাবে এক দীর্ঘ পুরুষ এসে ওর সামনে দাঁড়ালেন।"
Soumitra Biswas
Author : SOUMITRA BISWAS
Publisher : Bookfarm
Language : Bengali
Binding : Hardcover
Publishing Year : 2022
Pages : 200