Hardcover , Classic
কড়ি দিয়ে কিনলাম কড়ি দিয়ে কিনলাম-২ বইটির ভূমিকা:
রামায়ণ না-লিখে কেন কড়ি দিয়ে কিনলাম’ লিখেছি-তা প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় বলা আছে। আমি বাল্মীকি নই, বাল্মীকির সে প্রতিভাও আমার নেই। তিনি লিখেছেন সত্যযুগের কাহিনী, আমি লিখেছি কলিযুগের। কিন্তু আসলে কাজটা যত সহজ হবে ভেবেছিলাম তত সহজ হলো না। লিখতে গিয়ে দেখলাম কলিযুগের চেয়ে সত্যযুগ অনেক সত্য। সত্যযুগের পুণ্যের জয় নিশ্চিত, পাপের পরাজয় অনিবার্য। কিন্তু কলিযুগে সে বালাই নেই। এ যুগে মিথ্যে হত্যাপরাধেও বেকসুর খালাস হওয়া যায়। এ-যুগের রাবণের পক্ষে রামকে যুদ্ধে হারিয়ে অযযাধ্যার সিংহাসনও দখল করা সম্ভব, এমন কি সমাজে-সংসারে প্রাতঃস্মরণীয় হওয়ার নজীরও আছে। এ-যুগ টাকার যুগ, এ-যুগ কড়ির যুগ। এই কড়ির যুগের কাহিনী লিখতে গিয়ে তাই বার বার আমি মহাকবিকে স্মরণ করে অহঙ্কারের অপহ্নব ঘটাতে চেয়েছি।
কিন্তু এ-সত্ত্বেও ইচ্ছে ছিল উপন্যাসের শেষ পর্বে আমি বাল্মীকির মতই রাবণ-বধ সাঙ্গ করে রামকে অযোধ্যার সিংহাসনে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত করবো। এই কলকাতা শহরেই রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে এই উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটাবো। ভূগোলে না হোক সাহিত্যে অন্তত গান্ধীজীর স্বপ্ন সার্থক করবো। কিন্তু তা পারলাম না। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে অশুভ বুদ্ধির চক্রান্তে আমার সব পরিকল্পনা বানচাল হয়ে গেল।
ওয়াটার্লর যুদ্ধের পর ১৮১৫ সালে যারা রাবণকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে বন্দী করে। চিরকালের মত নিঃশেষ করতে চেয়েছিল, তারাই আবার সেই রাবণকে নিজেদের স্বার্থে। জাইয়ে তুললো ১৯৩২ সালে। একদিন ফ্রান্সের নেপলিয়ন আবার জার্মানীর চ্যান্সেলর হয়ে বসলো। যে-দেশ মোটা দামে জাপানকে লোহা বিক্ৰী করেছিল ১৯৩২ সালে, সেই দেশই আবার সেই লোহা সুদের বদলে বোমা হয়ে ফিরে এল ১৯৪২ সালে। অর্থাৎ ইংলণ্ডের পাউণ্ড, আমেরিকার ডলার, ফ্রান্সের ফ্রাঙ্ক, জার্মানীর মার্ক, রাশিয়ার রুবল, জাপানের ইয়েন, ইটালীর লীরা আর ইণ্ডিয়ার টাকা পৃথিবীর স্টক এক্সচেঞ্জের তাবৎ রাবণরা সব ভাগাভাগি করে দখল করে বসলো। এক রাবণ বহু রাবণে পরিণত হলো। সবাই বুঝলো, ন্যুরেমবুর্গ-ট্রায়ালে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, শুধু তাদেরই নয়, তাদের যারা বিচার করেছিল, সেই সব রাবণদেরও ফাঁসি হলে তবেই বেশি সুবিচার হতো। সুতরাং রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কী হবে, পৃথিবীতে কখন যে রাতারাতি রাবণরাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে তা কেউই টের পায়নি। টের যখন পাওয়া গেল তখন আর সময় নেই। সেই সময়েই এ-উপন্যাসের রাবণ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আরো বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসলো। একদিন মানুষের জন্যেই টাকার সৃষ্টি হয়েছিল, তখন টাকার জন্যেই সৃষ্টি হলো ঘোষাল সাহেবদের। আর সীতা? সীতার পাতাল প্রবেশ?
এ-যুগের সাধারণ মানুষের সাধ-আহ্লাদ বাসনা কামনার প্রতীক যদি হয় সতী, তো সে সমস্ত কিছুই অকালে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে মহৎ দাবীর খেসারৎ দিতে দিতে। মনুষ্যত্বকেও আজ চিনতে হয় রক্ত-মাংসের মূল্য দিয়ে। দেশ পত্রিকায় এ উপন্যাস ধারাবাহিক প্রকাশকালে অসংখ্য পাঠক-পাঠিকা আমাকে সনিবন্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন যেন সতীর কোনও সর্বনাশ না হয়। কিন্তু বাল্মীকিই কি সাঁতার পাতাল প্রবেশ রদ করতে পেরেছিলেন? বাল্মীকি যা পারেন নি আমি তা পারবো কেমন করে? আমি অত দক্ষতা কোথায় পাবো?
তবু নিজের মনে এই ভেবেই সান্ত্বনা পেয়েছিলাম যে এও হয়ত কলির মাহাত্ম। কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল। মাহাত্মটা কলির নয়, কড়ির।
Bimal Mitra
Ray O Martin Competitive Ganit Cracker 7000+ Questions & Answers
Madhyamik ...
Coffee Houser Kalo Beralta, Shreeparna Ghosh
Hardcover, Shreeparna Ghosh, A...