দিলীপকুমার রায়-এর জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৮৯৭। পিতামহ দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়। পিতা প্রখ্যাত কবি-নাট্যকার-সুরকার-গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। মাতা সুরবালা দেবী। পিতামাতার একমাত্র পুত্র। একটি মাত্র বোন— মায়া। মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারান। পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল একই সঙ্গে মাতৃ-পিতৃস্নেহে তাঁকে বড় করে তোলেন। ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত বাবার লালন, স্নেহ ও যত্ন গভীরভাবে পেয়েছেন। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় একুশতম স্থানাধিকারী। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অঙ্কে প্রথম শ্রেণীর অনার্সসহ উত্তীর্ণ হন ১৯১৮-য়। ১৯১৯-এ তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান অঙ্কে ট্রাইপস হওয়ার জন্য। পরের বছর ট্রাইপস-এর প্রথম ভাগ এবং পাশ্চাত্যসঙ্গীতের বিশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। জার্মানি ও ইতালিতে যান গানে আরও পারদর্শী হতে। ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষা শিক্ষা করেন। সঙ্গীতের সূত্রে দিলীপকুমার ইয়োরোপে রোমাঁ রলাঁ, বার্ট্রান্ড রাসেল, হেরমেন হেস, জর্জ দুহামেল, ফালোপ মিলার প্রমুখ মনীষীদের সান্নিধ্যলাভ করে ১৯২২-এ দেশে ফিরে আসেন। এখানে তিনি এই সময় থেকে আবদুল করিম খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, পণ্ডিত ভাতখণ্ডে, হাফিজ আলি খাঁ প্রমুখের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯২৭-এ সঙ্গীত সম্বন্ধে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য পুনরায় ইয়োরোপ যান। ১৯২৮-এ শ্রীঅরবিন্দর পণ্ডিচেরী আশ্রমে যোগ দেন। শ্রীঅরবিন্দের মহাপ্রয়াণের পর পণ্ডিচেরী আশ্রম ত্যাগ করেন। ভারত সরকার প্রেরিত সঙ্গীত মিশনে গিয়ে (১৯৫৩) তিনি ইয়োরোপের বহুদেশে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে, জাপানে ও মিশরে সঙ্গীতের উপর ভাষণ দেন। দেশে ফিরে শিষ্যা ইন্দিরা দেবীকে নিয়ে পুনায় গড়ে তোলেন ‘শ্রীহরিকৃষ্ণ মন্দির’। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর অন্তরঙ্গ আবাল্য বন্ধু। জওহরলাল নেহরু এবং সমসাময়িক বহু কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে সঙ্গীতের পাঠ্যসূচির জন্য রচনা করেন দুটি গ্রন্থ ‘গীতসাগর’ ও ‘সাঙ্গীতিকী’ (১৯৩৮)। তাঁর রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় একশো। সংগীত-নাটক একাডেমির সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৬৫-তে। রচিত গ্রন্থ: ভ্রাম্যমাণ, অঘটন আজো ঘটে, স্মৃতিচারণ, বহুবল্লভ, দ্বিচারিণী, তীর্থংকর, মধুমুরলী, ভিখারিণী, রাজকন্যা, উদাসী দ্বিজেন্দ্রলাল প্রভৃতি।
মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি ১৯৮০।